শ্যাম্পু করার পর চুলের যত্ন — ৮টি অসাধারণ প্রাকৃতিক উপায়!

বিভিন্ন কেমিক্যালযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহারে চুলের ক্ষতি নিয়ে আপনি কি প্রচন্ড উদ্বিগ্ন? শ্যাম্পু করার পর চুলের যত্নে এ পর্যন্ত অনেক কিছু ব্যবহার করেও ভালো ফলাফল পাননি? আপনার জন্য তাহলে আমাদের আজকের এই বিশেষ সেশন! আমরা আজকে শ্যাম্পু করার পর চুলের যত্ন নেওয়ার বেশ কিছু প্রাকৃতিক উপায় নিয়ে আলোচনা করব।

চলুন তবে মুল আলোচনায় চলে যাই এবং দেখে নেই কীভাবে শ্যাম্পু করার পরে প্রাকৃতিকভাবে চুলের যত্ন নেওয়া যায়!

চুলের যত্নে ন্যাচারাল জিনিস কেন গুরুত্বপূর্ণ?

বিশেষ করে কেমিক্যালযুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিস্কার করার পরে চুলের যত্নে ন্যাচারাল জিনিস বা উপায় ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথমত, বাজারে পাওয়া বেশীরভাগ শ্যাম্পুতে থাকা কেমিক্যাল চুলের প্রাকৃতিক তেল শুষে নেয়, যা চুলকে শুষ্ক ও রুক্ষ করে তোলে এবং চুল পড়ার কারণ হতে পারে। আর বিপরীতে আপনি যখন প্রাকৃতিক উপাদানগুলো দিয়ে চুলের যত্ন করা শুরু করবেন, যেহেতু এসব উপাদানে কোনো ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ থাকে না, তাই এরা চুলের ক্ষতি করবে না এবং চুলের প্রাউ শতভাগ খেয়াল রাখবে।

দ্বিতীয়ত, প্রাকৃতিক উপাদানগুলো যেমন নারকেল তেল, অ্যালোভেরা, মেথি, লেবুর রস এবং আমলকি চুলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখে।

এছাড়াও, প্রাকৃতিক উপাদানগুলো সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী, যা সবার জন্য সহজে ব্যবহারযোগ্য। প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহারে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, খুশকি এবং অন্যান্য চুলের সমস্যা দূর হয়, এবং চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।

আর এসব কারনেই, চুলের যত্নে ন্যাচারাল উপায়গুলো ব্যবহার করা দীর্ঘমেয়াদে চুলের জন্য বেশি উপকারী ও নিরাপদ।

শ্যাম্পু করার পর চুলের যত্ন

শ্যাম্পু করার পরে চুলের যত্ন — ৮ টি প্রাকৃতিক উপায়:

সাধারণত শ্যাম্পু বিভিন্ন কমার্শিয়াল কেমিক্যাল দিয়ে বানানো হয়। আর এজন্য আপনি যখন চুল পরিষ্কার করার জন্য  শ্যাম্পু ব্যবহার করেন, এই শ্যম্পু আপনার চুলের প্রোটিন লেয়ারকে কিছুটা হলেও ড্যামেজ করে দেয়। আর এই ড্যামেজ থেকে চুলকে রক্ষা করতে, পাশাপাশি  চুলকে আরো স্বাস্থ্যকর, মজবুত এবং সুন্দর করতে কিছু প্রাকৃতিক উপায় আপনি ব্যবহার করতে পারেন।

এই ব্লগে আমরা শ্যাম্পু করার পর চুলের যত্নে ৮টি চমৎকার এবং কার্যকরী ন্যাচারাল টিপস নিয়ে আলোচনা করব।

১. জবা ফুলের নির্যাস ব্যবহার করুন:

চুলের যত্নে সেই প্রাচীনকাল থেকেই জবা ফুলের ব্যবহার উল্লেখ করার মতো। জবা ফুল এবং পাতাতে থাকা মিউসিলেজ চুলের ড্যামেজ হওয়া প্রোটিনকে ঠিক হতে সাহায্য করে। যাই হোক, শ্যাম্পু করার পরে জবা ফুল অথবা জবা পাতার নির্যাস ( ফুল এবং পাতা থেতো করে অথবা ব্লেন্ড করলে যেটা পাওয়া যায়) চুলে লাগালে চুলের উজ্জ্বল ভাব অনেক বেড়ে যায়, চুল হয় সিল্কি এবং ঝরঝরে।

২. লেবুর রস দিয়ে ভেজা চুল ধুয়ে নিন:

এক মগ পানিতে অর্ধেক কাপ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এবার চুল শ্যাম্পু করার পরে যদি কন্ডিশনার লাগাতে চান, তাহলে কন্ডিশনার লাগানোর আগেই লেবু মেশানো পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।লেবুর রস চুলের খুশকি প্রতিরোধ করে এবং চুলকে ঝলমলে করে। যদি আপনার মাথায় খুসকির সমস্যা বেশী থাকে সেক্ষেত্রে, শ্যাম্পু করার পর চুলের গোড়ায় ও মাথার ত্বকে লেবুর রস ম্যাসাজ করুন। ১০-১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।

৩. অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করুন:

চুল বলেন আর ত্বক, অ্যালোভেরা জেল ছাড়া রুপচর্চা অথবা চুলের যত্ন কেমন যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। বিশেষ করে শুষ্ক এবং রুক্ষ চুলের যত্নে এটি অবশ্যই প্রয়োজনীয়। অ্যালোভেরা জেল ব্যবহারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এটি চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং খুশকি প্রতিরোধ করে। শ্যাম্পু করার পর চুলের গোড়ায় ও মাথার ত্বকে ভালোভাবে অ্যালোভেরা জেল ম্যাসাজ করুন। ১০-১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।

৪. নারকেল তেল ব্যবহার:

অনেকেই মনে করেন চুলে নারকেল তেল শুধু নানী দাদীরাই ব্যবহার করেন। নারকেল তেল যদিও চুলের যত্নে সেই প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে, কিন্তু এই আধুনিক যুগে এসেও কিন্তু সকল মেয়েরাই তাদের চুলে এটা কমবেশি ব্যবহার  করে থাকেন।

তো, শ্যাম্পু করার পর চুল শুকিয়ে নিন এরপরে  চুলে সামান্য নারকেল তেল ম্যাসাজ করুন। এটি চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং চুলকে নরম ও মজবুত করে। নারকেল তেলে প্রাকৃতিক ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা চুলের প্রোটিন ক্ষয় রোধ করে। চাইলে আপনি নারকেল তেল হালকা গরম করে নিতে পারেন, সাথে আমলকির রস এবং মেথির গুড়োও মিশিয়ে নিতে পারেন। এটা একেবারে ন্যাচারাল হেয়ার মাস্ক হিসেবে কাজ করবে।

৫. চুলে আমলকির রস লাগান:

আমলকি শুধু যে আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে ভালো কাজ করে তা নয়, পাশাপাশি আপনি যদি এই রস আপনার চুলে এবং মাথার ত্বকে ভালোভাবে লাগাতে পারেন, এই রস আপনার চুলের চেহারাই পাল্টে দিবে। আমলকির রস প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, যা চুলের বৃদ্ধিতে দারুণভাবে সহায়ক। শ্যাম্পু করার পর আমলকির রস চুলে লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট রেখে দিন। তারপর স্বাভাবিক  পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।

৬. চুলে চা’য়ের লিকার লাগান:

চায়ের লিকারে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যাফেইন এবং ট্যানিন থাকে, যা চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি চুলের শুষ্কতা কমায়, চুলকে নরম ও মসৃণ করে এবং চুলের রঙকে গভীর করে তোলে।

শ্যাম্পু করার পর চুল ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এরপর কিছুক্ষণ আগে তৈরি করা ঠান্ডা চায়ের লিকার চুলের গোড়া থেকে শেষ পর্যন্ত সমানভাবে ঢেলে দিন। চায়ের লিকার প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে। এটি চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং চুলকে নরম ও মসৃণ করে। পাশাপাশি এটি চুলের গোড়া শক্ত করে এবং খুশকি দুর করে। চায়ের লিকার দিয়ে চুল ধোয়ার পর পুনরায় পানি দিয়ে ধোয়ার প্রয়োজন নেই।

৭. অ্যাপল সাইডার ভিনেগার দিয়ে চুল ধুয়ে নিন:

শ্যাম্পু করার পর এক কাপ পানিতে এক টেবিল চামচ অ্যাপল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে চুল ধুয়ে নিন। এটি চুলের pH ব্যালেন্স ঠিক রাখে এবং চুলকে উজ্জ্বল করে। যদিও অ্যাপল সাইডার ভিনেগার চুলের যত্নে চমৎকার একটি প্রাকৃতিক উপাদান, কিন্তু এটা কিছুটা দামী প্রোডাক্ট হওয়ার কারনে সবার নাগালের মধ্যে নাও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে বাসায় অ্যাপল সাইডার ভিনেগার বানিয়েও চাইলে চুলে ব্যবহার করা যেতে পারে।

৮. চুলে ডিমের প্রোটিন মাস্ক লাগান:

ডিম প্রচুর পরিমানে প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ, যা চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এবং চুলের প্রোটিন লেয়ারকে উন্নত করে। একটি ডিম, এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, কয়েক ফোটা লেবুর রস  মিশিয়ে  বানিয়ে নিন চুলের প্রোটিন মাস্ক। এই মাস্ক চুলে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে দিন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। বিশেষ করে যারা চুলে কালার অথবা রিবন্ডিং করে চুলের বারোটা বাজিয়ে ফেলেছেন,  তাদের জন্য এই মাস্ক অবশ্যই দরকারী।

চুল পরা ঠেকাতে কী ব্যবহার করা যায়?

চুল পরা ঠেকাতে নিয়মিত কোল্ড প্রেস নারিকেল তেল এবং প্রাকৃতিক পেঁয়াজের তেল ব্যবহার করুন। এছাড়া মেথি, আমলকীর রস এবং অ্যালোভেরা জেলও চুল পরা বন্ধ করতে সাহায্য করে।

চুলের যত্নে কোন তেল উপকারী?

হালকা গরম করা নারকেল তেল, অলিভ ওয়েল বা জলপাইয়ের তেল এবং কাস্টার ওয়েল অনেক ভালো কাজ করে। পাশাপাশি শতভাগ প্রাকৃতিক পেঁয়াজের তেল চুলের গোড়া মজবুত করতে, চুল ঘন ও খুশকি দূর করতে অতুলনীয়।

তো, তেল যেটাই ব্যবহার করেন, চুলের গোড়ায় এবং মাথার তালুতে ভালোভাবে আঙুল দিয়ে ম্যাসাজ করতে একদম ভুলবেন না।

উপসংহার

এই আধুনিক কর্মব্যস্ততার যুগে চুলের যত্নে প্রাকৃতিক উপায়গুলো যেনো এক প্রকার আশীর্বাদস্বরুপ। প্রাকৃতিক উপাদানগুলো ব্যবহারে চুলের কোনো রকম ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই চুলের পুষ্টির জোগান হয়। নিয়মিত এসব ন্যাচারাল টিপস বা উপাদান ব্যবহার করলে চুল হয় সুস্থ, মজবুত এবং উজ্জ্বল, যা কেমিক্যালযুক্ত পণ্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে চুলকে রক্ষা করে।

আমাদের অন্যান্য ব্লগ পড়ার আমন্ত্রণ রেখে এখানেই শেষ করছি।
শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।

এসেনশিঅয়েল
Love Your Hair, Naturally.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart