পেঁয়াজের তেলের উপকারিতা — চুলের যে ৭টি সমস্যা দূর করে

পেঁয়াজ এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যেটা চুলের যাবতীয় সমস্যা দূর করতে সক্ষম। তবে উপকার গুলো পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে শতভাগ প্রাকৃতিক তেল ব্যবহার করতে হবে, কারণ বাজারের সস্তা ও কেমিক্যাল যুক্ত তেল উপকারের চেয়ে চুলের ক্ষতি করে বেশি। 

পেঁয়াজের তেলের উপকারিতা গুলোর পাশাপাশি এখানে আমরা প্রাকৃতিক তেল খুঁজে পাওয়ার উপায় এবং নিজে তৈরি করে নেওয়ার সহজ নিয়ম শেয়ার করেছি।

চলুন তাহলে, দেরি না করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো জেনে নেওয়া যাক।

পেঁয়াজের তেলের উপকারিতা:

পেঁয়াজের তেলের উপকারিতা

১. চুল পড়া বন্ধ করে:

পেঁয়াজের তেলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যার ফলে তেলটি ব্যবহারের প্রথম সপ্তাহ থেকেই চুল পড়া কমে যাওয়া লক্ষ্য করা যায়। তবে দীর্ঘ মেয়াদী ফলাফল পেতে অন্তত ২-৩ মাস ব্যবহার করা উচিৎ। চুল পড়া সমস্যা দূর করতে পেঁয়াজের তেল সারা বিশ্বে জনপ্রিয়, গুগলে একটু সার্চ করলেই হাজার হাজার তথ্য পাওয়া যায়।

২. নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে:

গবেষকরা দেখেছেন যে পেঁয়াজের রস বা তেল ব্যবহার করার ২ সপ্তাহ পরে চুলের বৃদ্ধি শুরু হয়। প্রায় ৭৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর ৪ সপ্তাহের পরে কিছু চুল পুনরায় গজিয়েছে এবং ৬ সপ্তাহে প্রায় ৮৭ শতাংশের চুল পুনরায় গজানোর অভিজ্ঞতা হয়েছে।

তাছাড়া ২০০২ সালে একটি গবেষণা করা হয় (Onion Juice (Allium cepa L.), A New Topical Treatment for Alopecia Areata) যেখানে একটি গ্রুপের সদস্যরা নিয়মিত তাদের চুলে পেঁয়াজের রস লাগাতেন। ফলে চুল বেড়েছে তাড়াতাড়ি, এমনকী নারী ও পুরুষ উভয়েই এই উপকার পেয়েছেন।

আপনার বয়স যদি ৪০ এর নিচে হয় এবং মাথার ত্বক যদি একদম সমান না হয়ে যায় তাহলে এখনো নতুন চুল গজানোর সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ফলিকল দুর্বল হয়ে যায়। ফলে নতুন চুল গজানোর সম্ভাবনা কমে ও চুল ধীরে ধীরে পাতলা হতে থাকে।

৩. খুশকি দূর করে:

পেঁয়াজে আছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিসেপটিক উপাদান, যা মাথার ত্বকের সংক্রমণ ও খুশকি দূর করে একদম প্রাকৃতিকভাবে।

আমাদের চুল পড়ে যাওয়ার পেছনে খুশকি অন্যতম একটি কারণ যা চুলের গোড়া নরম করে দেয় এবং ধীরে ধীরে চুল পড়ে যেতে থাকে। বিশেষ করে শীতকালে খুশকির সমস্যাটা বেশি দেখা যায় বা সারা বছরই অনেকের মাথায় হয়ে থাকে, এই কঠিন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহার করতে পারেন পেঁয়াজের তেল।

৪. অকালে চুল পেকে যাওয়া রোধ করে:

বর্তমানে অল্প বয়সে চুল পেকে যাওয়ার সমস্যা অনেক বেশি লক্ষ্য করা যায়, এর ফলে অনেকেই আবার চুলে কলপ ব্যবহার করে থাকে যেটা চুল পাকার পরিমাণ এবং চুল পড়ার আরো বাড়িয়ে দেয়।

অকালে চুল পাকা শুরু হলেই পেঁয়াজের তেল ব্যবহার শুরু করুন, এতে আছে এনজাইম, খনিজ ও এন্টিঅক্সিডেন্ট যার ফলে অল্প পাকা চুল ধীরে ধীরে কালো হতে শুরু করে এবং বাকি চুলগুলো অকালে পেকে যাওয়া রোধ করে।

৫. চুল লম্বা হতে সাহায্য করে:

পেঁয়াজের তেল ব্যবহারে মাথার ত্বকের pH লেভেল স্বাভাবিক থাকে। এতে রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয়, যার ফলে চুল দ্রুত লম্বা ও গোড়া মজবুত হয়।

আপনার প্রিয় চুল গুলো লম্বা করতে বাজারে এত প্রোডাক্টের ভিড়ে পেঁয়াজের তেল হওয়া উচিত প্রথম পছন্দ। তাছাড়া আরো দ্রুত ফলাফল পেতে এমন একটি তেল বেছে নিন যেটায় কালোজিরা তেলের মিশ্রন রয়েছে অথবা আলাদাভাবেও কালোজিরা তেল ব্যবহার করতে পারেন, কারণ এটিও দ্রুত চুল লম্বা করতে সাহায্য করে।

৬. ভেঙে যাওয়া ও ডগা ফাটা রোধ করে:

চুলের ডগা ফাটা সমস্যার জন্য প্রতিনিয়তই হয়তো আপনাকে চুলের ডগাগুলো কেটে চুল ছোট করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে চুল লম্বা করা বেশ কঠিন, তাছাড়া চুল ভেঙে যাওয়ার সমস্যা যাদের আছে তাদের ক্ষেত্রে ঘন চুল ধীরে ধীরে পাতলা হতে থাকে। এই সমস্যাগুলো হয়ে থাকে সাধারণত প্রোটিনের অভাব দেখা দিলে। 

আমাদের চুল প্রোটিন দ্বারা গঠিত, আর পেঁয়াজে থাকা সালফার চুলের প্রোটিন বৃদ্ধি করে ভেঙে যাওয়া ও ডগা ফাটা রোধ করে।

৭. প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে:

প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের কাজ করে ও মাথার ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে ডিহাইড্রেট করে এই তেল, যা শুষ্ক ও ঝরঝরে চুলের সমস্যা দূর করে চুল হয় উজ্জ্বল ও ঝলমলে।

সাধারণত চুলে শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হয় চুলের আদ্রতা ঠিক রাখতে, এই বাড়তি ঝামেলা এবং কেমিক্যালযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহারের মাত্রা কমাবে এই প্রাকৃতিক পেঁয়াজের তেল।

প্রাকৃতিক তেল চেনার উপায়:

অনলাইনে বা বাজারে অনেক ধরনের পেঁয়াজের তেল পাওয়া যায়, তবে খুব অল্প কিছু তেল আছে যেগুলো কেমিক্যাল মুক্ত এবং প্রাকৃতিক। আমরা কিছু উপায় বলে দিচ্ছি, যে বিষয়গুলো খেয়াল করলে আপনি উপযুক্ত একটি তেল খুজে পাবেন যেটা আপনার চুলের ক্ষতি করবে না।

  • একদম সস্তায় ২০০ – ২৫০ মিলি কিছু তেল পাওয়া যায়, সেগুলো থেকে দূরে থাকুন।
  • ৩-৪ টার বেশি উপাদান থাকবে না, এতে কার্যকারিতা কমে যায় বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। 
  • তেলে কোন সুগন্ধি থাকবে না, যে উপাদান গুলো দিয়ে তৈরি করা হবে শুধু সেগুলোর ঘ্রাণ পাওয়া যাবে।
  • পেঁয়াজের তেল তৈরিতে নারিকেল তেলের মিশ্রণ প্রয়োজন হয়, সেহেতু ঠান্ডায় তেলটি জমাট বেধে যাবে। গরমের দিনে আপনি ফ্রিজের নরমাল অংশে রেখে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন যে জমাট বাধে কিনা।
  • তেলের মেয়াদ যদি এক বছরের বেশি থাকে তাহলে অবশ্যই সেটা প্রিজারভেটিভ যুক্ত।
  • তেলটি সারারাত মাথায় রাখার উপযোগী কিনা এটা লক্ষ্য করুন।
  • ব্যবহার করে ভালো মনে না হলে রিটার্ন করার সুযোগ আছে এমন তেলটি বাছাই করুন।

এভাবে যাচাই বাছাই করে কেনা হয়তো আপনার জন্য কষ্টসাধ্য, যদি আমাদের কোন তেল সাজেস্ট করতে হয় যেটা আপনি একদম নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন তাহলে সেটি হবে EssentiOil এর অনিয়ন হেয়ার অয়েল

তেলটি একদম ঘরোয়া ভাবে তৈরি, যার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এতে রয়েছে পেঁয়াজ, কালোজিরা তেল, কোল্ড প্রেস নারিকেল তেল ও মেথির মিশ্রণ।

কালোজিরা তেল ও মেথি যোগ করায় এর কার্যকারিতা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। গুনগত মান ঠিক রাখতে ব্যবহার করা হয়েছে কাচের বোতল, তাছাড়া রয়েছে ৭ দিনের মধ্যে রিটার্ন করার সুযোগ।

এটা ছাড়া neofarmers এর তেল টাও আপনি ব্যবহার করতে পারেন তবে, এদের তেল পরিমাণের তুলনায় দাম অনেক বেশি এবং সারারাত মাথায় রাখার মত উপযোগী নয়। যার ফলে ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটু ঝামেলা হতে পারে।

পেঁয়াজের তেল তৈরি করার পদ্ধতি:

যদিও প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল এরপরও আমরা চেষ্টা করেছি সহজে বুঝিয়ে দেওয়ার। প্রথমেই হয়তো খুব ভালোভাবে তৈরি করতে পারবেন না তবে আশা করি কয়েকবার চেষ্টা করলে ভালো মানের একটি তেল তৈরি করতে পারবেন।

উপকরণ:

  • লাল বর্ণের পেঁয়াজ
  • নারিকেল তেল
  • মেথি
  • কারি পাতা (জরুরি নয়)
  • ব্লেন্ডার
  • মোটা তলা বিশিষ্ট কড়াই বা প্যান
  • গ্যাসের চুলা
  • সুতি কাপড়
  • তেল রাখার বোতল

পদ্ধতি:

  • দুটো পেঁয়াজ ও দুই চা চামচ মেথি ব্লেন্ড করে নিন বা বেটে পেস্ট তৈরি করুন।
  • পেঁয়াজের পেস্ট ও ২০০ মিলি নারিকেল তেল কড়াইতে নিয়ে একদম হালকা তাপে জ্বালিয়ে নাড়তে থাকুন।
  • পেঁয়াজ কালো বর্ণের না হওয়া পর্যন্ত জ্বালাতে থাকুন, খেয়াল রাখবেন পেস্ট যেন পুড়ে না যায়।
  • কালো বর্ণের হলে চুলা বন্ধ করে দিয়ে তেলটি ঠান্ডা হতে সময় দিন।
  • ঠান্ডা হলে একটা সুতি কাপড় দিয়ে তেলটি ছেকে নিন।
  • এরপর এটি একটি বোতলে সংরক্ষণ করুন, তবে কাচের বোতল হলে বেশি ভালো হয়।

এভাবেই নিজে তৈরি করে ফেলতে পারেন চুলের জন্য মহা উপকারী পেঁয়াজের তেল, তবে পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ না থাকলে বা বিষয়টি ঝামেলার মনে হলে নিঃসন্দেহে EssentiOil এর তেলটি ব্যবহার করতে পারেন

উপসংহার:

আশা করি এই আর্টিকেল থেকে আপনি কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছেন, চুলের যত্নের নতুন ও কার্যকারী সকল টিপস পেতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে এবং এরকম গুরুত্বপূর্ণ সকল আর্টিকেল পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইট এর Blog সেকশনে

আপনার নিজের ও চুলের প্রতি শুভকামনা রেখে আজকে এখানেই শেষ করছি, হয়তো আবার আপনাকে সাহায্য করতে পারব অন্য কোন তথ্য দিয়ে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart